
‘মোহন স্যার সকল দল-মতের মানুষের কাছে সজ্জন ও অনুকরণীয় ব্যক্তি ছিলেন’



আমরা জন্মেছি বলে মৃত্যু অনিবার্য। তরপরও কিছু মৃত্যু আমাদের কাঁদায়, ব্যথিত করে সর্বোপূরি নিজেদের মধ্যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। অধ্যাপক মোজাম্মেল হক চৌধুরী মহন স্যারের মৃত্যুও আমাদের কাছে তাই। তিনি আজ আমাদেরকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি দিলেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। মহান রবের কাছে প্রার্থনা, আল্লাহ স্যারকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন।

অধ্যাপক মোজাম্মেল হক চৌধুরী চাঁদপুর জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবনে সক্রিয়ভাবে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে শিক্ষকতা পেশার একপর্যায়ে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি আাসনের চারবারের সাবেক এমপি প্রয়াত এম এ মতিন স্যারের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। শিক্ষকতার পাশাপাশি রাজনীতি করলেও তিনি ছিলেন ফুলটাইম একজন পেশাদার শিক্ষক, আর পাটটাইম রাজনীতিতে সময় দিতেন। সাবেক এমপি এম এ মতিন স্যারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং রাজনীতির অঙ্গণে সম্পৃক্ত থাকলেও নিজ পেশা ও কর্মের প্রতি তিনি ছিলেন যথেষ্ট দায়িত্বশীল ও মনোযোগী।
শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর নেওয়ার পর অধ্যাপক মোজাম্মেল হক চৌধুরী মহন রাজনীতিতে পুরোদস্তুর সক্রিয় হন। এর কিছুদিনের মধ্যে তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে মনোনীত হন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি উক্ত পদে আসিন ছিলেন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক নির্বাচিত সভাপতি এবং হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপির সমন্বয়ক ও ধানের শীষ প্রতীকের কান্ডারি ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক- বলা যায় মহন স্যারকে অনেকটা জোর করে অধিকার খাটিয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদ গ্রহণে বাধ্য করেন।
তাঁর মতো একজন উচ্চশিক্ষিত, মার্জিত, সদালাপী ও আত্মমর্যাদাশীল ব্যক্তিত্ব উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদে আসীন হওয়ায় দলের ক্রান্তিকালে স্থানীয় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হন। দলের দুঃসময়ে নানা জটিল রোগকে সঙ্গী করেও তিনি দলকে সুসংগঠিত ও নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হন। খরা ও ঝরাগ্রস্ত রাজনীতির ডামাডোলের মধ্যে এবং শত হামলা-মামলা ও ভয়ভীতিকে উপেক্ষা করে চাঁদপুর-৫ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের গত দু’বারের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হকের নির্দেশনা ও তাঁর নির্মোহ আনুগত্যের মাধ্যমে তিনি হাজীগঞ্জে দলকে সুসংগঠিত রাখতে সক্ষম হন।
অধ্যাপক মোজাম্মেল হক চৌধুরী সব দল ও মতের মানুষের কাছে একজন স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবে অনুকরণীয় ও গ্রহণীয় ছিলেন, যা বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে দুস্প্রাপ্য। এমন এক সময়ে তিনি চলে গেলেন যখন তাঁর মতো রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের খুব প্রয়োজন ছিল। তাঁর এ শূন্যতা অপূরনীয়। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি জানাচ্ছি সমবেদনা। আল্লাহ মরহুমকে জান্নাতবাসী করুন।

